মিসাইল ফুরিয়ে আসছে ইরানের, প্রথম ধাক্কাতেই কমান্ডার নিহত: দাবি ইসরায়েলি গোয়েন্দা প্রধানের
সংবাদ ডেস্ক | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ |
ইরান-ইসরায়েল চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে এক রাতে সবচেয়ে শান্ত সময় পার করলো ইসরায়েল। এরই মধ্যে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা দাবি করেছেন— ইরানের মিসাইল মজুদ দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে।
ড্যানি সিট্রিনোভিজ, যিনি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগের ইরান ও শিয়া অ্যাক্সিস প্রোগ্রামের প্রধান ছিলেন এবং বর্তমানে জাতীয় নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক, বলেন:
> “যুদ্ধের শুরুতে ইরানের হাতে প্রায় ২,০০০টি মিসাইল ছিল। তবে ইসরায়েল যেভাবে লঞ্চার ও উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করছে, তাতে ইরান আর বড় আকারে পাল্টা আঘাত হানতে পারছে না।”
মূল পয়েন্টসমূহ:
ইরানের মিসাইল সংখ্যা এখন ১,২০০-র কাছাকাছি বলে ধারণা।
ইরান একসাথে ১০০-২০০ মিসাইল নিক্ষেপ করতেও হিমশিম খাচ্ছে।
ইসরায়েলের বিমান শ্রেষ্ঠত্ব এবং গোয়েন্দা সক্ষমতা ইরানকে কোণঠাসা করেছে।
ড্যানি আরও বলেন:
> "তাদের বড় ধরনের হামলা চালানোর সক্ষমতা কমছে। মজুদ যা ছিল, যুদ্ধের শেষ পর্যন্ত তাদের সেটিকেই ব্যবহার করতে হবে। নতুন করে মিসাইল উৎপাদন এখন প্রায় অসম্ভব।"
প্রথম ধাক্কায় চরম ক্ষতি:
তিনি আরও জানান, যুদ্ধের শুরুর দিকেই ইরানের বিপ্লবী গার্ডের এয়ারস্পেস বিভাগের প্রধান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমির আলী হাজিজাদেহ নিহত হন। যিনি ইরানের আগের হামলাগুলো পরিচালনা করেছিলেন।
> "তিনি অত্যন্ত অভিজ্ঞ ছিলেন, তার মতো দক্ষ নেতৃত্ব এখন আর নেই। এটা ইরানের জন্য বড় ক্ষতি।”
ইরানের 'একটি ট্রিক':
একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন:
> "ইরানের সামরিক শক্তি আসলে একরকম কাগুজে বাঘ। এই জন্যই তারা নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠায় প্রক্সি বাহিনী গড়েছে এবং পরমাণু অস্ত্রের দিকে ঝুঁকছে।”
তিনি যোগ করেন:
> "তাদের এখনকার অবস্থা খুব দুর্বল, এবং তারা জানে— যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়ায়, তবে তাদের পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।"
বর্তমান পরিস্থিতি:
৬৪৭ জন আহত
১৯,০০০ এর বেশি ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ
২,৭২৫ জনকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে
ইসরায়েল বলছে, প্রায় ৪০০ মিসাইল ও শত শত ড্রোন নিক্ষিপ্ত হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র ৩৫টি আঘাত হেনেছে
ইরানের মিসাইল ফুরিয়ে আসছে? ইসরায়েলি দাবির পেছনে সত্য নাকি প্রচারণা?
ইসরায়েলি সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা সম্প্রতি দাবি করেছেন যে, চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইরানের মিসাইল মজুদ দ্রুত কমে আসছে। তবে এই বক্তব্য ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে— এটি কি বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরছে, নাকি ইসরায়েলের কৌশলগত এক প্রচারণা?
ইসরায়েলি দাবি কী?
ড্যানি সিট্রিনোভিজ, যিনি একসময় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা বিভাগের ইরান ডেস্কের প্রধান ছিলেন, বলেন—
> “ইরানের হাতে যুদ্ধের শুরুতে ২,০০০-এর মতো মিসাইল ছিল। এখন তা ১,২০০-তে নেমে এসেছে। ইসরায়েলের টার্গেটেড স্ট্রাইকে লঞ্চার ও উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস হওয়ায় ইরান আর বড় আকারে পাল্টা হামলা চালাতে পারছে না।”
তিনি আরও দাবি করেন, ইরান এখন “গণনায়” যুদ্ধ করছে— অর্থাৎ হাতে থাকা মজুদের সীমাবদ্ধতার কথা ভেবে খুব সতর্কভাবে মিসাইল ব্যবহার করছে।
এই দাবি কতটা বিশ্বাসযোগ্য?
যা সত্য হতেই পারে:
ইসরায়েল ইরানের বেশ কিছু লঞ্চিং স্টেশন ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করেছে— এটা আন্তর্জাতিক সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।
টানা কয়েকদিন মিসাইল ছোড়ার পর গত রাতে ইরান অপেক্ষাকৃত শান্ত ছিল, যা মজুদ কমে আসার ইঙ্গিত দিতে পারে।
যুদ্ধের শুরুতেই IRGC এয়ারস্পেস কমান্ডার হাজিজাদেহ নিহত হন, যা ইরানের কৌশলগত ক্ষতি।
যা সন্দেহজনক বা প্রচারণার অংশ হতে পারে:
এই তথ্য এসেছে কেবল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে— যাদের যুদ্ধের মাঝে নিজেদের শক্তি দেখানো জরুরি।
ইরানের আসল সামরিক সক্ষমতা কিংবা মজুদের হিসাব কোনো স্বাধীন সূত্রে যাচাই হয়নি।
এটা মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টির একটা অংশ হতে পারে, যাতে ইরানের ভিতরে ও মিত্রদের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়।
কৌশলগত যুদ্ধ কি এখানে বড় ভূমিকা রাখছে?
এই দাবির মাধ্যমে ইসরায়েল একদিকে নিজের সামরিক সাফল্য তুলে ধরছে, অন্যদিকে ইরানের দুর্বলতা দেখিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় করতে চাইছে।
একজন পশ্চিমা গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন:
> “ইরান জানে তারা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না। এজন্য তারা প্রক্সি বাহিনী আর পারমাণবিক শক্তির উপর নির্ভর করছে।”
ইসরায়েলের এই দাবি আংশিক সত্য হলেও, পুরো বিষয়টি সম্ভবত একটি কৌশলগত বার্তা— যার উদ্দেশ্য যুদ্ধের মাঠে ও কূটনৈতিক অঙ্গনে ইরানকে কোণঠাসা করা।
সুত্র: iran international