ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হাতে মার্কিন মুসলিম তরুণ নিহত, পরিবারের তদন্ত দাবি
![]() |
সাইফুল্লাহ মুসাল্লেত -© সংগৃহীত |
ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলায় সাইফুল্লাহ মুসাল্লেত নামের এক মার্কিন মুসলিম তরুণ নিহত হয়েছেন, বলে জানিয়েছে নিহতের পরিবার ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, শুক্রবার (১১ জুলাই) রামাল্লার উত্তরের সিঞ্জিল শহরে এই নৃশংস হামলার ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ট্যাম্পা শহরের বাসিন্দা মুসাল্লেত ফিলিস্তিনে তার আত্মীয়দের দেখতে গিয়েছিলেন।
পরিবারের সদস্যরা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-কে জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। তার চাচাতো বোন ফাতমাহ মুহাম্মদ সামাজিক মাধ্যমে জানিয়েছেন, সাইফুল্লাহ সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিলিস্তিন সফরে যান।
ঘটনার সময় আরও একজন ফিলিস্তিনি, মোহাম্মদ শালাবি, বসতি স্থাপনকারীদের গুলিতে নিহত হন বলেও জানায় ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মার্কিন প্রতিক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম তীরে এক মার্কিন নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি তারা জানে। তবে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার কারণে বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
২০১৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে অন্তত ৯ জন মার্কিন নাগরিক নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন আল–জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহও। কিন্তু এসব ঘটনার কোনো বিচার হয়নি।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উদ্বেগ
কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশনস (CAIR) এ ঘটনায় তদন্ত ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে মার্কিন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
CAIR-এর উপপরিচালক এডওয়ার্ড আহমেদ মিচেল বলেন, “যেহেতু আগের হত্যার কোনো বিচার হয়নি, ইসরায়েল এখন নির্বিঘ্নে মার্কিন ফিলিস্তিনি ও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “ট্রাম্প নিজেই বলেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট’, কিন্তু একজন মার্কিন নাগরিক নিহত হওয়া সত্ত্বেও যদি তিনি কোনো ব্যবস্থা না নেন, তবে এটি প্রকৃত অর্থে ‘ইসরায়েল ফার্স্ট’ প্রশাসন।”
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ
ইনস্টিটিউট ফর মিডল ইস্ট আন্ডারস্ট্যান্ডিং (IMEU) জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ও সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনিদের ওপর আরও বেশি হামলা চালাচ্ছে।
জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা বলেছে, পশ্চিম তীরের বসতিগুলো আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের পরিকল্পনার অংশ।
ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু পশ্চিমা দেশ সহিংস বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিলেও, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর থেকে হামলার সংখ্যা আরও বেড়েছে।
ইসরায়েলি পক্ষের দাবি
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, “ফিলিস্তিনিরা একটি ইসরায়েলি গাড়িতে পাথর ছোড়ে, তাই সহিংসতা শুরু হয়” এবং তারা ঘটনার তদন্ত করছে।
হামাসের প্রতিক্রিয়া
ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগঠন হামাস এই হত্যাকাণ্ডকে ‘বর্বরতা’ বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদেরকে বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছে।
গণহত্যার মাত্রা
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, গাজা ও পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৭,৭৬২ জন ফিলিস্তিনি। এসব হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করছে বিভিন্ন সংস্থা।
তথ্যসূত্র: আল জাজিরা, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট, রয়টার্স