যেসব দোষ-ত্রুটি থাকলে পশু কোরবানি দেয়া যাবে, যাবে না — ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ
মুক্তকলম২৪ | আপডেট: ২৮ মে, ২০২৫
🕌 ইসলাম ধর্মে কুরবানির তাৎপর্য
কুরবানী হলো ইসলামে একটি মহান ইবাদত, যা প্রতি হিজরী বছরের যিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আদায় করা হয়ে থাকে। এটি হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর সুন্নাহর অনুসরণে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু জবেহ করার মাধ্যম।
![]() |
যেসব দোষ-ত্রুটি থাকলে পশু কোরবানি দেয়া যাবে, যাবে না — ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিস্তারিত বিশ্লেষণ |
কুরবানির জন্য পশুকে নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়:
- নির্ধারিত বয়স পূর্ণ হতে হবে
- শরীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে
- বড় ধরনের ত্রুটি বা অঙ্গহানি থাকা যাবে না
❌ যেসব দোষে কুরবানির পশু জায়েয নয়
১. অন্ধ বা এক চোখে অন্ধ
যে পশুর একটি চোখ সম্পূর্ণ অন্ধ, অথবা দুই চোখের কোনো একটিতে দৃষ্টিশক্তি নেই, সে পশু কুরবানির জন্য অযোগ্য।
“চার ধরনের পশু কুরবানীর জন্য উপযুক্ত নয়: একেবারে কানা, যার অন্ধত্ব স্পষ্ট...”
— (আবু দাউদ: ২৮০২, তিরমিজি: ১৪৯৭)
২. গুরুতর অসুস্থ
যে পশু স্পষ্টভাবে অসুস্থ (যেমন: ক্ষত, পচন, জ্বর বা দুর্বলতা), কুরবানী তার দ্বারা জায়েয হবে না।
৩. ল্যাংড়া
যে পশু এতটাই ল্যাংড়া যে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারে না, তার কুরবানী বৈধ নয়।
৪. অত্যন্ত রোগা
যে পশুর শরীরে একেবারে গোশত নেই, হাড় দেখা যায় — এমন দুর্বল পশু অযোগ্য।
৫. কান বা লেজ সম্পূর্ণ কাটা
যদি পশুর কান বা লেজ সম্পূর্ণ কাটা হয় (জন্মগত নয়), তবে তা কুরবানির অযোগ্য।
৬. দাঁতহীন পশু
যে পশুর দাঁত পড়ে গেছে এবং খেতে অক্ষম, সে পশু কুরবানির জন্য উপযুক্ত নয়।
৭. জন্মগত অঙ্গহীনতা
যদি পশু জন্ম থেকেই একটি কান, লেজ বা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছাড়া হয়, তবে সেটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
✅ যেসব ত্রুটিতে কুরবানী জায়েয
- কানের সামান্য কাটা অংশ
- সামান্য খোঁড়া হলেও যদি হাঁটতে পারে
- একটু দুর্বল হলেও যদি গোশত থাকে
- খাওয়ার ক্ষমতা থাকলে অল্প দাঁতের ঘাটতি
📚 ফিকহ অনুযায়ী দৃষ্টিভঙ্গি
- হানাফি মাজহাব: স্পষ্ট চারটি দোষ থাকলে কুরবানী জায়েয নয়।
- শাফেয়ি ও মালেকি: কিছু অতিরিক্ত দোষেও কুরবানী অযোগ্য হতে পারে।
- হাম্বলি: অধিকাংশ ক্ষেত্রে হানাফিদের মতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
📖 কুরআনের কি বলে?
“আল্লাহর কাছে পশুর গোশত কিংবা রক্ত পৌঁছে না; বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”
— (সূরা হজ্জ: ৩৭)
📌 উপসংহার
কুরবানির পশু নির্বাচনের সময় আমাদের সতর্ক থাকা উচিত যেন পশুতে কোনো বড় ধরনের দোষ না থাকে। ইসলাম চায়, আমরা সর্বোত্তম জিনিস আল্লাহর রাহে কুরবানী করি। সুস্থ ও সুন্দর পশু আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়।
আসুন, আমরা কুরবানির আগে পশুর অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করি এবং শরিয়তসম্মত ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
🔗 সূত্র:
- সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং: ২৮০২
- সুনান তিরমিজি, হাদিস নং: ১৪৯৭
- সূরা হজ্জ: ৩৭
- ফাতাওয়া হিন্দিয়া, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৯৪