ইব্রাহিম ট্রাওরে: যিনি আফ্রিকার ইতিহাস বদলে দিচ্ছেন - মাথাব্যথা কেন আমেরিকার
![]() |
বুরকিনা ফাসোর সেনাবাহিনী ও প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম ট্রাওরে – ফাইল ছবি |
বুরকিনা ফাসো—পশ্চিম আফ্রিকার একটি ছোট দেশ, যেখানে অভ্যন্তরীণ সংঘাত, জঙ্গি হামলা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা যেন নিত্যদিনের সঙ্গী। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে এক তরুণ সেনা অফিসার আকস্মিকভাবে ক্ষমতায় আসেন যিনি এখন আফ্রিকার কোটি মানুষের মাঝে আলোচনার কেন্দ্রে: ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরে।
ক্ষমতায় আসা: এক সাহসী সেনা অভ্যুত্থান
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২, বুরকিনা ফাসোতে ঘটে আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান। দেশের তৎকালীন সামরিক শাসক পল-হেনরি দামিবাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনীর তরুণ অংশের নেতৃত্বে উঠে আসেন ৩৪ বছর বয়সী ইব্রাহিম ট্রাওরে। দামিবা জঙ্গিবাদ দমনে ব্যর্থ হয়েছেন—এমন অভিযোগ তুলে ক্ষমতা নেয় সেনাবাহিনীর একটি অংশ। সেই অভ্যুত্থানের মুখ্য সংগঠক ছিলেন ট্রাওরে।
কে এই ইব্রাহিম ট্রাওরে?
ইব্রাহিম ট্রাওরে (Ibrahim Traoré) হলেন বুরকিনা ফাসোর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও একজন সামরিক নেতা। তিনি ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশটিতে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন, যা তাকে বিশ্বের অন্যতম কনিষ্ঠ রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে পরিচিত করেছে।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি:
- পূর্ণ নাম: ক্যাপ্টেন ইব্রাহিম ট্রাওরে
- জন্ম: প্রায় ১৯৮৮ সালে, বুরকিনা ফাসোতে
- পেশা: সেনা কর্মকর্তা (Captain, Burkina Faso Armed Forces)
- ক্ষমতায় আগমন: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে
- পূর্ববর্তী নেতা: পল-হেনরি সানদাওগো দামিবা
তার জনপ্রিয়তা ও পশ্চিমা সমালোচনা
ইব্রাহিম ট্রাওরে সাধারণ মানুষের মাঝে জনপ্রিয়, বিশেষ করে তরুণদের কাছে। তিনি ফ্রান্স-বিরোধী অবস্থান গ্রহণ করে দেশ থেকে ফরাসি সেনাবাহিনীকে বের করে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছেন এবং ওয়াগনার গ্রুপকেও নিরাপত্তা সহযোগিতায় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে জানা যায়।
তিনি নিজেকে পরিচয় দেন “জনগণের সেনা” হিসেবে। সাধারণ পোশাকে রাস্তায় হাঁটা, বাজারে ঘুরে ঘুরে মানুষের সঙ্গে কথা বলা, সেনাদের মতো খাদ্য খাওয়া—এসবই তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
নতুন আফ্রিকার স্বপ্ন
ট্রাওরের নেতৃত্বে বুরকিনা ফাসো ধীরে ধীরে ফ্রান্সের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত করছে। তিনি পশ্চিমাদের উপর নির্ভর না করে আফ্রিকান দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য চাচ্ছেন। পাশাপাশি রাশিয়া ও মালির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াচ্ছেন। বলা হয়ে থাকে, রাশিয়ার ভাড়াটে সেনা সংস্থা ওয়াগনার গ্রুপকেও নিরাপত্তা সহযোগিতায় ডাকা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা কী বলছেন?
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাওরে এক নতুন প্রজন্মের আফ্রিকান বিপ্লবের প্রতীক। তবে সামরিক শাসনের দীর্ঘস্থায়ী হলে গণতন্ত্রের জন্য হুমকিও হতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাওরে আফ্রিকায় একটি "নিও-বিপ্লবী আন্দোলন"-এর প্রতীক হয়ে উঠছেন। যেখানে তরুণ নেতৃত্ব পশ্চিমা উপনিবেশবাদী প্রভাবের বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছে। তবে তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনাও রয়েছে—গণতন্ত্রপন্থীরা বলছেন, সামরিক নেতৃত্ব দীর্ঘ মেয়াদে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়।
বুরকিনা ফাসোর ভবিষ্যৎ কী?
ইব্রাহিম ট্রাওরের উত্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেয়: আফ্রিকার তরুণরা জেগে উঠেছে, পশ্চিমাদের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। ট্রাওরে কতদূর এগোতে পারবেন, তা সময়ই বলে দেবে।
তিনি বর্তমানে "অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান" হলেও দেশের নতুন সংবিধান ও নির্বাচনের রূপরেখা তৈরিতে কাজ করছেন বলে জানা যায়। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, যদি তিনি দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকতে চান, তাহলে গণতান্ত্রিক পথ আরো দীর্ঘ হবে।
আপনার মতামত কি?
আপনি কী মনে করেন, ইব্রাহিম ট্রাওরে আফ্রিকায় সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে পারবেন? নিচে কমেন্টে জানিয়ে দিন আপনার মতামত।